Keep and Share logo     Log In  |  Mobile View  |  Help  
 
Visiting
 
Select a Color
   
 
মহেশখালীর ‘মাতারবাড়ী’ গভীর সমুদ্র বন

Creation date: Mar 2, 2023 8:20am     Last modified date: Mar 2, 2023 8:20am   Last visit date: Apr 6, 2024 11:07pm
1 / 20 posts
Mar 2, 2023  ( 1 post )  
3/2/2023
8:20am
Santo SEo (seosanto7)

দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে অসীম সম্ভাবনার নাম বঙ্গোপসাগর। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিবেচনায় ক্রমশ আরও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এ উপসাগর। একসময় বঙ্গোপসাগরের ভৌগোলিক অবস্থানের কৌশলগত গুরুত্ব কাজে লাগিয়ে বৃহৎ শক্তিগুলোর সঙ্গে দরকষাকষির পুরোটা সুবিধাই ভোগ করে আসছিল ভারত। সম্প্রতি মিয়ানমারের রাখাইনে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে সম্পাদিত চুক্তির সূত্রে বঙ্গোপসাগরে ভাগ বসাতে যাচ্ছে চীন। ভৌগোলিক কারণে সাগরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার এ বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় রয়েছে বাংলাদেশও।  

 

আরও পড়ুনঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ  

 

কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা মাতারবাড়ী। বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় এ এলাকার হাজার হাজার একর ভূমিতে একসময় সাগরের লোনাজল জমিয়ে চাষ হতো লবণের। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় সেই লবণভূমিতেই তৈরি হচ্ছে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, যাকে বলা হচ্ছে বাংলাদেশের আগামীর স্বপ্ন। এ বন্দর ঘিরেই অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটবে বাংলাদেশ, যা ছাড়িয়ে যাবে সিঙ্গাপুরকেও।


photo

 

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘২০২৬ সালে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম পুরোদমে চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কার্যক্রম শুরুর যাবতীয় কাজ শেষ করার পুরো প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’ তিনি বলেন, মাতারবাড়ী হবে অত্র অঞ্চলের বাণিজ্যিক হাব। এ বন্দর থেকে চট্টগ্রাম, মোংলা, পায়রা বন্দরে সরাসরি পণ্য পরিবহন হবে। এ ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশ এ বন্দর ব্যবহার করবে। তখন প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে। ঘটবে অর্থনৈতিক বিপ্লব, যা সিঙ্গাপুরকেও ছাড়িয়ে যাবে।’ সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় এলাকা মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে হাজার হাজার একর ভূমিতে চলছে বিরামহীন কর্মযজ্ঞ, যা শুরু হয়েছিল ২০২০ সালের জানুয়ারিতে। বর্তমানে দেশি-বিদেশি হাজার হাজার প্রকৌশলী ও শ্রমিক ব্যস্ত লবণ চাষের ভূমিকে গভীর সমুদ্রবন্দরে রূপান্তর করার কাজে। 

 

আরও পড়ুনঃ পাতাল রেলে ২৫ মিনিটেই বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর



এরই মধ্যে সাগরে ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ অ্যাপ্রোচ চ্যানেল তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। ২৫০ মিটার গভীর চ্যানেলকে বৃদ্ধি করে করা হচ্ছে ৩৫০ মিটারে। ড্রেজিংয়ের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বন্দরকে রক্ষার জন্য তৈরি করা হয়েছে ঢেউনিরোধ বাঁধ, যা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বুঝে নেবে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎসেবা দিতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজও প্রায় শেষ। আগামী জুনে তা চালু হওয়ার কথা রয়েছে। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের পাশাপাশি জাতীয় গ্রিডেও সরবরাহ হবে। মাতারবাড়ী বন্দরে তৈরি হয়ে গেছে অয়েল জেটি, যাতে নোঙর করেছে ১১২টি জাহাজ। এতে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১ দশমিক ৩৭ লাখ টন। এসব জাহাজ থেকে বন্দর আয় করেছে ৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। কনটেইনার ভেসেল নোঙর করার জন্য তৈরি হবে ছয়টি জেটি। জেটি তৈরির টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। আগস্টের মধ্যে শুরু হবে জেটি তৈরির নির্মাণকাজ। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর থেকে সড়কপথে যান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে তৈরি করা হচ্ছে প্রায় ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক। মাতারবাড়ী থেকে সড়ক তৈরির কাজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। এ সড়কটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত হবে। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পুরোদমে চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। মাতারবাড়ী ঘিরে মহাপরিকল্পনা নিয়েছে সরকার, যার অংশ হিসেবে রেললাইন কক্সবাজার পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপ দেওয়া হচ্ছে। মহেশখালী এলাকাকে স্মার্ট নগরীতে রূপান্তর করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ স্মার্ট নগরীতে থাকবে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা। চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, ‘মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের কারণে আমাদের আমদানি-রপ্তানিতে সময় কমে আসবে। এখান থেকে সরাসরি পণ্য রপ্তানির কারণে আমাদের প্রতি বছর ৬ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে। বিভিন্ন দেশ এ বন্দর ব্যবহার করার কারণে আয় হবে আরও বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার। এ বন্দরের কারণে অত্র এলাকার অর্থনৈতিক অবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে।’ 

 

আরও পড়ুনঃ এক নজরে বাংলাদেশের উন্নয়ন

 

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ভারত ও মিয়ানমার ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের প্রায় পুরোটাই সম্পন্ন হয় বঙ্গোপসাগর দিয়ে। দীর্ঘদিন ধরে বঙ্গোপসাগর উপকূলে একটি গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ভূ-রাজনীতির কারণে তা এতদিন সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

 

আরও পড়ুনঃ মেগাপ্রকল্পে বাংলাদেশের উন্নয়নচিত্র 

 

বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে এ যাবৎ জাপানের সবচেয়ে বড় উদ্যোগ বিগ-বি। বিগ-বি হলো বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট। এর আওতায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী দেশ জাপানের সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) মাতারবাড়ীতে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কোল জেটি করতে গিয়ে সেখানে একটি বাণিজ্যিক বন্দর নির্মাণের সম্ভাব্যতা দেখতে পায়। মাতারবাড়ী অঞ্চলে সমুদ্রের গভীরতা ১৫.৩ মিটার। তবে খনন শেষে প্রাথমিকভাবে মাতারবাড়ী চ্যানেলে সারাবছরই ন্যূনতম ১৬ মিটার গভীরতা পাওয়া যাবে। চ্যানেলের বাইরে সাগরের গভীরতা ৩০ মিটার। ফলে এ বন্দরে অনায়াসে বড় আকৃতির মাদার ভেসেল নোঙর করতে পারবে।

 

আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের মেগা প্রকল্প  

 

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর অন্য যেকোনো আঞ্চলিক বন্দরের তুলনায় ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের চাহিদা পূরণে অধিকতর সুবিধা দেবে। বেশিসংখ্যক দেশ এ বাণিজ্যিক বন্দর ব্যবহার করতে পারবে। ভারতের সেভেন সিস্টার্স (উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য), কলকাতা ও হলদিয়া বন্দর, মিয়ানমার, স্থলবেষ্টিত নেপাল ও ভুটান তাদের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে এ বন্দর ব্যবহারে আকৃষ্ট হবে। মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর-পূর্ব এশিয়ার কেন্দ্রস্থলে অবস্থানের কারণে আশিয়ান ও উপসাগরীয় দেশগুলোরও এ বন্দর ব্যবহারের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া তেল-গ্যাস ও অন্যান্য সমুদ্রসম্পদ আহরণ ও ব্যবহারের সুযোগ সম্প্রসারিত হবে।

 

আরও পড়ুনঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেগা প্রকল্পে বাংলাদেশ 

 

অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম বলেন, ‘মাতারবাড়ী হবে সোনাদিয়ার বিকল্প। এ কারণে আমরা খুব বেশি পিছিয়ে থাকব বলে মনে করি না। ওখানে একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব হবে। মাতারবাড়ীতে আমাদের একটি চ্যানেল তৈরি করে নিতে হচ্ছে। এ কারণে ব্যায় কিছুটা বাড়লেও ১৫-১৬ মিটার গভীরতার বড় জাহাজ সরাসরি ভিড়তে পারবে। বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় এটি বাংলাদেশের সাহসী পদক্ষেপ।’ 


কোনো বিরোধী দলীয় (বিএনপি, জামাআত) অপশক্তি (পিনাকী ভট্টাচার্য, তাসনিম খলিল, তারেক, নুরু ) গুজব বা বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন থামিয়ে রাখতে পারবে না। সকল বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের শীর্ষে পৌঁছাবে।  #এখনইসময় #উন্নয়ন #বাংলাদেশ #শেখহাসিনা #ওবায়দুলকাদের #ডিজিটালবাংলাদেশ